Saturday, May 16, 2009
ভিত্তিহীন রসঃ আবুল হায়াত
জমে গেল আর কি!
শহরে চাল গুঁড়ো করা এখন আর কোনো সমস্যাই নয়। বাড়িতে বসে গ্রাইন্ডারে যদি না-ও সম্ভব হয়, যেকোনো দোকান থেকে প্যাকেটের চালের আটা এনে পিঠা তৈরি করে নিতে অসুবিধা নেই। সরঞ্জামও আজকাল বাজারে পাওয়া যায়। হয়তো গ্যাসের চুলার পিঠা অত সুস্বাদু হবে না, তার পরও রস+পিঠার আনন্দ উপভোগ করতে বাধা নেই।
বাধা নেই তো বললাম, তবে রস কোথায় পাবেন?
পাটালিগুড় কিনে দুধে ভিজালে রস হবে বটে, তবে সে রসে মন না ভরারই কথা। সে ক্ষেত্রে চলে যান ঝিটকা কিংবা সাভারের আশুলিয়া নয়তো পুবাইল। রস পেয়ে যাবেন নিশ্চয়।
তাতেও যদি ব্যর্থ হন, তাহলে?
তাহলে নতুন রস সরবরাহ লাইন একটি খোলা হয়েছে আপনাদের জন্য। বারমেসে রস সরবরাহ নিশ্চিত হবে। পিঠার সঙ্গে খেতে না পারলেও এ রসে ভিজাতে পারবেন সারা সপ্তাহের সব খটমটে, হিজিবিজি, দাঁতভাঙা খবরাখবর আর টেলিভিশন টক শো।
কিছুটা হলেও মুক্তি পাবেন এসব যন্ত্রণা থেকে।
বুঝতেই পারছেন, কোন রসের কথা বলার চেষ্টা করছি। জি, প্রথম আলোর রস+আলো।
আমি এ রসের ঝাঁঝটা বাড়ানোর একটু চেষ্টা করি না কেন।
প্রথমে সাংবাদিকতার সংজ্ঞা দিয়ে শুরু করি-
১• সাংবাদিকতা হলো দুই টাকা দিয়ে সাদা কাগজ কিনে ১০ টাকায় বিক্রি করা।
২• সাংবাদিকতায় সফল হতে হলে পাঠকদের খেপিয়ে দেবেন, দেখবেন পরদিন আপনাদের পত্রিকার অর্ধেকই পাঠকদের লেখায় পূর্ণ হয়ে যাবে।
৩• চিকিৎসকেরা তাঁদের ভুলকে কবরে পাঠান, উকিলেরা তাঁদের ভুলগুলোকে চড়ান ফাঁসিকাষ্ঠে, আর সাংবাদিকেরা তাঁদের সব ভুলকে চাপান পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায়।
সাংবাদিক ভাইবোনেরা কি ক্ষিপ্ত হচ্ছেন? না, তাহলে তো আর রস হবে না, আমি পত্রপত্রিকায় প্রকৌশলীদের নিয়েও এ ধরনের কতই না রস করেছি, সে শুধু রসই, কখনো একটু হালকা, কখনো-সখনো বা একটু ভারী বা ঘন। স্বাদের হেরফের হলেও দুটোই সুস্বাদু। এর বেশি কিছু নয়। আমার কলম তো প্রেসের স্বাধীনতার আওতায় পড়ে, নাকি?
অবশ্য প্রেসের স্বাধীনতা বলতে তো বোঝায় শুধু পত্রিকা-মালিকের স্বাধীনতা। সে ক্ষেত্রে আমার বলার নেই কিছুই।
দুটো ছোট্ট চুটকি বলে আজকের রসযন্ত্রণার ইতি টানি।
এক ভদ্রলোক পত্রিকা অফিসে ফোন করে জানতে চান-‘ভাই, আমি পত্রিকার প্রথম পাতায় নাম ছাপাতে চাই, সহজ উপায় বাতলাতে পারেন?’ সম্পাদক বললেন, ‘হঁ্যা পারি, আমাদের পত্রিকাটা হাতে নিন, নিয়েছেন? ঠিক আছে, এবার এটা পড়তে পড়তে রাস্তা পার হোন-’ কিছুক্ষণ নীরব, তারপর ক্যাঁ-চ করে আওয়াজ পেয়ে ফোনটা রেখে সম্পাদক বললেন, ‘এই তো হয়ে গেছে।’
এক ভদ্রলোক পত্রিকায় তাঁর মৃত্যুসংবাদ দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে পত্রিকা অফিসে ফোন করেন-‘পত্রিকায় আজ সকালে আমার যে মৃত্যুসংবাদ বেরিয়েছে আমি সেই ব্যাপারে ফোন করেছি।’
সম্পাদকের উত্তর, ‘কোথা থেকে বলছেন? দোজখ না বেহেশত?’
সর্বশেষ যন্ত্রণাটা দিই এবার।
এক পত্রিকার সম্পাদক গর্ব করে বক্তৃতা দিচ্ছেন-‘আমার পত্রিকাই সর্বপ্রথম রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের খবর ছেপেছিল, আবার দেখুন, আমার পত্রিকাই দুদিন পর সর্বপ্রথম জানিয়েছিল যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের খবরটা ছিল সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
আসলে সবই ভিত্তিহীন। রসের খবরের হয়তো কোনো ভিতই থাকে না। আসলে কি তা-ই, নাকি কঠিন খবরেরও প্রায়ই পাওয়া যায় না ভিত্তির হদিস?
Thursday, May 14, 2009
বুয়েট-রঙ্গ
কংক্রিটে ঘেরা একটি জায়গা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার সব কিছুই কংক্রিটের। এমনকি কিছু মানুষ আছে যারা কংক্রিটের তৈরি। বুয়েটেরভাষায়-এনারা হচ্ছেন আঁতেল। দিনমান তাঁদের মাথায় কেবল ক্লাস টেস্ট, কুইজ আর ভাইভার দুশ্চিন্তা। এ ছাড়া বুয়েটের বাদবাকি আমজনতার জীবন ব্যাপকবৈচিত্র্যের। সে জীবনে রঙ্গরসের ঘাটতি তো নেই-ই; বরং রয়েছে প্রাচুর্য। বুয়েটের রঙ্গ নিয়ে কথা হবে, কিন্তু ‘তরিকুল’ ও ‘ব্যাটারি’ নিকনেমের আমার প্রিয়বন্ধুদ্বয়কে নিয়ে কিছু বলা হবে না-এ অসম্ভব। তাই এ লেখা প্রকাশের পর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিকল হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা মাথায় রেখে হলেও তাদের নিয়েকিছু বলতে চাই।
ঘটনা এক
তরিকুল, জুজু ও ব্যাটারি লঞ্চে করে গেছে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের রিভার ক্রুজে। লঞ্চের মধ্যে তারা ঘুরছে-ফিরছে, এদিক-সেদিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। হঠাৎ তাদেরইচ্ছা জাগল লঞ্চের ছাদে গিয়ে নদীর মুক্ত বায়ুসেবনের। ছাদে গিয়ে দেখা গেল, এক পাশে একদঙ্গল নারীযাত্রী চেয়ারে বসে আড্ডা দিচ্ছে। তরিকুল, জুজু কিংবাব্যাটারির নারীপ্রীতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করাটা এই লেখকের জীবনের প্রতি হুমকিস্বরূপ! ধরা যাক, এ ধরনের কোনো আকর্ষণ কিংবা প্রীতি নয়, নিতান্ত প্রয়োজনসত্ত্বেই আমাদের তরিকুল নারীযাত্রীদের মধ্যে উপস্থিত হয়ে বিশেষ একজনকে উদ্দেশ করে বলল-‘ম্যাম, চেয়ারটা নেওয়া যাবে?’ ম্যাম বললেন-‘নিন না, প্লিজ।’ তরিকুল গদগদ হয়ে বলল, ‘থ্যাংকস।’ বলে চেয়ারে টান দিল। ট্র্যাজেডি এখানেই! লঞ্চের ছাদের লোহার চেয়ার সাধারণত ছাদের সঙ্গে সংযুক্ত অবস্থায় থাকে।নারীদের আধিক্যের কারণেই কিনা কে জানে, তরিকুলের এটা আর মনে ছিল না! সে চেয়ার ধরে টানে, চেয়ার তো আর ওঠে না। সে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে হাসারচেষ্টা করে। উল্টো সমস্বরে হেসে ওঠে মেয়েরা। অবশ্য তার চেয়ে বেশি জোরে শোনা যায় জুজু আর ব্যাটারির হাসি!
ঘটনা দুই
লঞ্চ চাঁদপুরে ভিড়েছে। আধাঘণ্টা বিরতি। ওরা তিনজন নিচে নামবে স্থলভূমি পরিদর্শনে। তিনজনের মধ্যে যার নাম ব্যাটারি, সে পৃথিবীর সব বিষয় সহ্য করতেপারে, কেবল তার এই ডাকনামটি ছাড়া। এমনিতে ব্যাটারির দেহাকৃতি হক ব্যাটারির মতো। তাই তার এই সরল নামকরণ। কিন্তু ব্যাটারি তার দেহাকৃতি নিয়েভয়ঙ্কর রকমের সচেতন। সে অসংখ্যবার আমাদের শপথ করিয়েছে, এই নামে যেন তাকে আমরা আর না ডাকি। আমরা যথাযথ উপঢৌকনের বিনিময়েশপথনামায় স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে মেয়েদের সামনে এ চুক্তির কথা আমাদের মনে থাকে না! সে যা-ই হোক, আমাদের ব্যাটারিরনারীপ্রীতিও সুবিদিত। এর মধ্যেই লঞ্চে সে একজনের সঙ্গে খাতির জমিয়ে ফেলেছে। লঞ্চ চাঁদপুরে থামার পর সেই মেয়ে বলল, ‘আপনি আমাকে একটি জিনিস কিনেএনে দিতে পারবেন নিচের বাজার থেকে?’
ব্যাটারি জানতে চাইল, ‘কী জিনিস?’
‘জি, দুটি থ্রিএ সাইজের পেন্সিল ব্যাটারি, এমপি-থ্রি প্লেয়ারের জন্য।’
যদিও তরিকুল ও জুজু সবই শুনল, তার পরও ব্যাটারি নিচে নামার সময় খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল, ‘কী রে, কী কিনতে নিচে যাস?’
ব্যাটারি একটা কড়া দৃষ্টি হানল। তরিকুলের হাসি তখন দেখে কে
দৈনিক প্রথম আলো, ১৪ ডিসেম্বর ২০০৮
তিনিও বাংলা বোঝেন
ইংরেজি বড়ই বিড়ম্বনাদায়ক ভাষা। পড়তে গেলে ঝামেলা। বলতে গেলেও বড় ঝামেলা। তবে শুনতে গেলে আর কোনো ঝামেলা নেই। তখন হিব্রু, তামিল, ইংরেজি-মানে বাংলা ছাড়া দুনিয়ার আর সব ভাষা একই রকম মনে হয়।
তবে পেটের দায়ে এখন ওই ইংরেজিকেই সমঝে-সামলে চলতে হয়। যারা এই ভাষাটায় কথা বলে, তাদের সামনে পড়ে প্রায়ই মনে মনে কাতরাতে থাকি, ‘হা, ওপরওয়ালা! কেন বাংলা ছাড়াও কথা বলার উপায় বের করেছিলে?’ ওপরওয়ালা জবাব দেন না। জবাব দিলেন আমার চাকরির ওপরওয়ালা-উৎপল শুভ্র। ডেভহোয়াটমোরের কথা বুঝতে কষ্ট হয়েছে শুনে হাসলেন। বললেন, ‘এতেই কাতরাচ্ছ বাছা? ডেভ তো শ্রীলঙ্কার খেয়েপরে বেশ এশিয়ান কেতার ইংরেজি বলেন। টেরপাবে সত্যিকারের অস্ট্রেলীয়র ইংরেজির হাতে পড়লে!’ এতেও ঠিকমতো ভয় পেলাম কি না, নিশ্চিত হতে পারলেন না। দিন কয়েক পরে হাতে একটা লেখা ধরিয়েদিলেন। একটা গল্প। বললেন, হাসির গল্প।
আমার কাছে ‘হরর’ গল্প মনে হলো। এক ভারতীয় ক্রিকেটার প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া গেছেন। স্বাগতিকদের মধ্যে কে যেন শুধিয়েছে, ‘এখানে মরতে এসেছেকাম হেয়ার টু ডাই)?’ বুঝুন অবস্থাটা! মরার এই প্রস্তাব পেয়ে ভয়েই মরার জোগাড় বেচারা। বলেন, ‘না ভাই! না ভাই!’ কিসের না ভাই! ‘আমি তো শুনলামতুমি মরতেই এসেছ!’ ক্রিকেটারটির পালানোর আগেই ভারতের তখনকার অধিনায়ক বিষেন সিং বেদি বললেন, ‘তুই ভয় পাচ্ছিস কেন?’ মানে বেদিও মরারদলে? নাহ্। আসলে নাকি অস্ট্রেলীয় ওই ভদ্রলোক বলেছেন, ‘তুমি আজ এসেছ-টু ডে?’ অস্ট্রেলীয়র মুখে পড়ে ‘টু ডাই’ হয়ে গেছে! (
উদ্দেশ্য সার্থক। আমি ইংরেজিকে আগেই ভয় পেতাম। তার মধ্যে এবার ‘অস্ট্রেলীয় ইংরেজি’র আতঙ্কে দিন গুজরান করতে থাকলাম। মানে বনে বাঘ আছে জেনেগিয়ে সিংহেরও ভয় পাওয়া আর কি! ততক্ষণে আমার অবশ্য ‘রাম মারুক আর রাবণ মারুক’ অবস্থা। ইংরেজি বলেই তো ভয় দেবে, অস্ট্রেলীয় হোক আরসাইবেরীয়।
তাই যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে চলে গেলাম টিম মের সামনে। এই ভদ্রলোক অস্ট্রেলিয়ার সাবেক স্পিনার। বাংলাদেশে মে এসেছেন ক্রিকেটারদের সংগঠন গড়তে।তাঁর সংবাদ সম্মেলনে যেতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে সংবাদ যত না হয়, তার চেয়ে বেশি হয় ‘রিফ্রেশমেন্ট’ (খাওয়ার কথা সোজা বাংলায় বললে কেমন শোনায়না!)।
দ্বিতীয়টির ওপর বেশি টান থাকায় গেলাম টিম মের সংবাদ সম্মেলনে। মে আর জুন-যা-ই হোক না কেন, গেলাম। কল্পনার একটুও এদিক-ওদিক হলো না। বিপদতৈরি হলোই। বিধির কী বিধান, বিপদে পড়লেন মে!
ইদানীং বেশি বেশি ক্রিকেট খেলা হচ্ছে বলে এক সাংবাদিক শুধালেন, ‘বেশি ক্রিকেট খেলা ব্যাপারটা কি তোমাকে কষ্ট (হার্ট) দেয়?’ ওই ‘হার্ট’ নিয়েই লাগল গোল।হার্ট’ শব্দটা আর বোঝেন না মে। একবার বুঝলেন। সেবার ধরে নিলেন, এ ‘হার্ট’ মানে হৃদয়! উপায় না পেয়ে সামনে হাঁটু গেড়ে বসা বিবিসির হাসান মাসুদওবোঝানোর চেষ্টা করতে লাগলেন (আসন না পেয়ে হাঁটু গেড়ে বসেছিলেন, বিনয়ের দাপটে না)। কে বোঝে কার কথা! ততক্ষণে বোঝা গেছে, সমস্যাটা টিম মেরই।বিবিসি তো আর আমাদের মতো বাংলায় ইংরেজি বলে না। ‘
কোনোভাবেই মেকে ‘হার্ট’ করা যাচ্ছে না। কাঁহাতক সহ্য করা যায়? এক সাংবাদিক উঠে দাঁড়িয়ে, দুই হাত তুলে খাঁটি বাংলায় বললেন, ‘ভাই, তুই কি ব্যথাপাইছস?’ (ইংরেজিতে তুমি, তুই-সব এক বলে ‘তুই’টাকেই বেছে নিলেন?) বিগলিত হাসিটা দেখে মনে হলো, এবার কিছু বুঝেছেন মে। দেখুন, টিম মেও ইংরেজির চেয়ে বাংলা ভালো বোঝেন।
দেবব্রত মুখোপাধ্যায়
দৈনিক প্রথম আলো, ১৪ ডিসেম্বর ২০০৮
001
চোখের জলে ভাসছি আমি
চোখের তারায় হাসি
অনেক ছবির মাঝে দেখ
তোমার ছবি আঁকি
রাত গুলো মোর অন্যরকম
সাদার মাঝে কালো
ঝাপসা চোখে দেখছি সবই
কেমন এলোমেলো
ঘুমের খোঁজে হেঁটে বেড়াই
মেঘের অলিগলি
পথ হারিয়ে সেই খেলা তে নিজের কাছেই হারি
ফোস্কা গায়ে রৌদ্র স্নানে
আলোর মশাল জেলে
পাপড়ি গুলো মেলবে
আবার হয়তো সময় পেলে
তোমার কী আজ রাতে একটু সময় হবে?
বসবে এসে আমার পাশে
আসতো আমার তব
Aaqib Ahsan
SSC/2009