Thursday, May 14, 2009

বুয়েট-রঙ্গ

কংক্রিটে ঘেরা একটি জায়গা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার সব কিছুই কংক্রিটের। এমনকি কিছু মানুষ আছে যারা কংক্রিটের তৈরি। বুয়েটেরভাষায়-এনারা হচ্ছেন আঁতেল। দিনমান তাঁদের মাথায় কেবল ক্লাস টেস্ট, কুইজ আর ভাইভার দুশ্চিন্তা। ছাড়া বুয়েটের বাদবাকি আমজনতার জীবন ব্যাপকবৈচিত্র্যের। সে জীবনে রঙ্গরসের ঘাটতি তো নেই-; বরং রয়েছে প্রাচুর্য। বুয়েটের রঙ্গ নিয়ে কথা হবে, কিন্তুতরিকুলব্যাটারিনিকনেমের আমার প্রিয়বন্ধুদ্বয়কে নিয়ে কিছু বলা হবে না- অসম্ভব। তাই লেখা প্রকাশের পর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিকল হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা মাথায় রেখে হলেও তাদের নিয়েকিছু বলতে চাই

ঘটনা এক
তরিকুল, জুজু ব্যাটারি লঞ্চে করে গেছে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের রিভার ক্রুজে। লঞ্চের মধ্যে তারা ঘুরছে-ফিরছে, এদিক-সেদিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। হঠা তাদেরইচ্ছা জাগল লঞ্চের ছাদে গিয়ে নদীর মুক্ত বায়ুসেবনের। ছাদে গিয়ে দেখা গেল, এক পাশে একদঙ্গল নারীযাত্রী চেয়ারে বসে আড্ডা দিচ্ছে। তরিকুল, জুজু কিংবাব্যাটারির নারীপ্রীতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করাটা এই লেখকের জীবনের প্রতি হুমকিস্বরূপ! ধরা যাক, ধরনের কোনো আকর্ষণ কিংবা প্রীতি নয়, নিতান্ত প্রয়োজনসত্ত্বেই আমাদের তরিকুল নারীযাত্রীদের মধ্যে উপস্থিত হয়ে বিশেষ একজনকে উদ্দেশ করে বলল-‘ম্যাম, চেয়ারটা নেওয়া যাবে?’ ম্যাম বললেন-‘নিন না, প্লিজ।তরিকুল গদগদ হয়ে বলল, ‘থ্যাংকস।বলে চেয়ারে টান দিল। ট্র্যাজেডি এখানেই! লঞ্চের ছাদের লোহার চেয়ার সাধারণত ছাদের সঙ্গে সংযুক্ত অবস্থায় থাকে।নারীদের আধিক্যের কারণেই কিনা কে জানে, তরিকুলের এটা আর মনে ছিল না! সে চেয়ার ধরে টানে, চেয়ার তো আর ওঠে না। সে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে হাসারচেষ্টা করে। উল্টো সমস্বরে হেসে ওঠে মেয়েরা। অবশ্য তার চেয়ে বেশি জোরে শোনা যায় জুজু আর ব্যাটারির হাসি!

ঘটনা দুই
লঞ্চ চাঁদপুরে ভিড়েছে। আধাঘণ্টা বিরতি। ওরা তিনজন নিচে নামবে স্থলভূমি পরিদর্শনে। তিনজনের মধ্যে যার নাম ব্যাটারি, সে পৃথিবীর সব বিষয় সহ্য করতেপারে, কেবল তার এই ডাকনামটি ছাড়া। এমনিতে ব্যাটারির দেহাকৃতি হক ব্যাটারির মতো। তাই তার এই সরল নামকরণ। কিন্তু ব্যাটারি তার দেহাকৃতি নিয়েভয়ঙ্কর রকমের সচেতন। সে অসংখ্যবার আমাদের শপথ করিয়েছে, এই নামে যেন তাকে আমরা আর না ডাকি। আমরা যথাযথ উপঢৌকনের বিনিময়েশপথনামায় স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে মেয়েদের সামনে চুক্তির কথা আমাদের মনে থাকে না! সে যা- হোক, আমাদের ব্যাটারিরনারীপ্রীতিও সুবিদিত। এর মধ্যেই লঞ্চে সে একজনের সঙ্গে খাতির জমিয়ে ফেলেছে। লঞ্চ চাঁদপুরে থামার পর সেই মেয়ে বলল, ‘আপনি আমাকে একটি জিনিস কিনেএনে দিতে পারবেন নিচের বাজার থেকে?’

ব্যাটারি জানতে চাইল, ‘কী জিনিস?’

জি, দুটি থ্রিএ সাইজের পেন্সিল ব্যাটারি, এমপি-থ্রি প্লেয়ারের জন্য।
যদিও তরিকুল জুজু সবই শুনল, তার পরও ব্যাটারি নিচে নামার সময় খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল, ‘কী রে, কী কিনতে নিচে যাস?’

ব্যাটারি একটা কড়া দৃষ্টি হানল। তরিকুলের হাসি তখন দেখে কে


তানিম হুমায়ুন

দৈনিক প্রথম আলো, ১৪ ডিসেম্বর ২০০৮

No comments:

Post a Comment